শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮:১৫, জুন ২৩, ২০২২ | 112
সরকারি চাকুরে মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন। চট্টগ্রাম রেলওয়ের জুনিয়র টিটি। পাশাপাশি রেলওয়ে শ্রমিক লীগের চট্টগ্রাম শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নামে অভিযোগের ফর্দটাও বেশ লম্বা। গত সপ্তাহে কর্মস্থলের শীর্ষ কর্তার অনুমতি ছাড়াই তিনি উড়াল দিয়েছেন সৌদি আরবের জেদ্দায়। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের তথ্য বলছে, গত ১৫ জুন তিনি দেশ ছাড়েন। জেদ্দা যাওয়ার জন্য ছুটির আবেদনও করেননি তিনি।
শুধু দাপট দেখিয়ে জেদ্দাযাত্রা নয়, নিজের নামে সরকারি বাসা বরাদ্দ থাকলেও সেই বাসায় থাকেন না তিনি। বরাদ্দ পাওয়া বাসা এবং আশপাশের খালি জায়গায় ঘর বানিয়ে ভাড়ায় লাগিয়েছেন। কাজে অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগও বিস্তর। এ জন্য দেওয়া হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশও। সময়ের আগেই পেয়েছেন পদোন্নতি। তবু তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ, তিনি রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি মো. লোকমান হোসেনের ভাতিজা। চাচার পাশাপাশি নিজেও নেতা হওয়ায় কাউকে পরোয়া করেন না রেলের এই প্রভাবশালী টিটি। ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি 'চাকরি লাগবে, আছেন লোকমান মামা' শিরোনামে সমকালে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। তাতে রেলের শ্রমিক নেতা হওয়ার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে নিজের ছেলেমেয়ে, ভাইপো-ভাতিজি, ভাগ্নে-ভাগ্নি, ভাগ্নেবউ, নাতি-নাতনিসহ অন্তত ২০ জন স্বজনকে চাকরি পাইয়ে দিয়ে 'মামা'র খ্যাতি পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। চাকরি পাওয়াদের তালিকায় নাম ছিল ভাতিজা শাহাদাতেরও।
চট্টগ্রামে টিটিদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছেন রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'সরকারি অনুমোদন (জিও) ছাড়া বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। জুনিয়র টিটি শাহাদাত বিদেশ যাওয়ার জন্য আমার কাছে কোনো আবেদন করেননি।' এক প্রশ্নের জবাবে রেলের এই কর্মকর্তা বলেন, 'অনুমতি ছাড়া শাহাদাতের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। আপাতত তাঁকে অনুপস্থিত দেখানো হবে। তিনি কাজে যোগ দেওয়ার পর তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
রেলওয়ে শ্রমিক লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও শাহাদাত হোসেনের চাচা লোকমান হোসেন চাকরি থেকে অবসরে গেছেন অনেক আগেই। অনুমোদন ছাড়া বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লোকমান হোসেন বলেন, 'শাহাদাত কখন সৌদি আরবে গেছে, সেটা আমি জানি না।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১২ জুলাই রেলে টিসি (টিকিট কালেক্টর) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন শাহাদাত হোসেন। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী পদোন্নতি পেতে হলে নির্দিষ্ট একটি সময় পার হতে হয়। শাহাদাত এর আগেই পদোন্নতি পেয়েছেন। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর প্রভাব খাটিয়ে টিসি থেকে জুনিয়র টিটি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে যান তিনি। চাচা শ্রমিক লীগ নেতা হওয়ায় জুনিয়র টিটি পদে থেকেও বেশ দাপটে চলেন শাহাদাত। চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে হাসপাতালের পাশে তাঁর নামে একটি বাসা বরাদ্দ থাকলেও সেখানে তিনি থাকেন না। সরকারি বাসার পাশাপাশি খালি জায়গায় ঘর বানিয়ে ভাড়া লাগিয়েছেন তিনি। কাজে অবহেলা ও গাফিলতির বিষয়টি প্রমাণ হওয়ায় গত ডিসেম্বরে তাঁর বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা। পরে তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
Developed By Muktodhara Technology Limited