শিরোনাম
সৈকত আহমেদ বেলাল, জামালপুর | ১৪:০৮, অক্টোবর ২৮, ২০১৮ | 1795
সৈকত আহমেদ বেলাল, জামালপুর
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের কাতলামারী মৌজার ২ একর জমিনের উপর নির্মিত হয়েছিল ব্রিটিশের নীল তৈরী করার কারখানা। ধ্বংসপ্রাপ্ত সেই জায়গাটি দিনদিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে। পাশর্^বর্তী জমির মালিকরা দখল করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ২‘শ বছর এদেশ শাসন করত ইংরেজরা। সেই সময় ইংরেজরা জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের কাতলামারি মৌজার ২ একর জমির উপর নীল বানানোর কারখানা নির্মাণ করে। কারখানার ২‘শ গজ দক্ষিণ পাশেই ছিল নদী। সেখানে ইংরেজদের বড় বড় জাহাজ আসত নীল নেয়ার জন্য। জাহাজ বাঁধার জন্য ২টি ধ্বংসপ্রাপ্ত ইটের পিলার এখনো দৃশ্যমান। সেই কারখানার একটি লোহার কড়াই ছিল, যার ওজন ছিল প্রায় ৩৫ মণ। কড়াইয়ে প্রতিবার প্রায় ২০ মণ নীল জাল দেয়া হত। ইংরেজরা প্রথমে এ দেশের সাধারণ কৃষকদের বিভিন্ন লোভ-লালসা দেখিয়ে নীল চাষ করাতে আগ্রহী করে তুলত। কয়েক বছর নীল চাষ করে কৃষকেরা দু‘বেলা খাবার জোগাড় করতে না পারায় তারা নীল চাষ থেকে পিছিয়ে আসতে শুরু করে। এরপর থেকেই সাধারণ কৃষকদের উপর শুরু হয় ইংরেজদের অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন। এখনো নীল কুঠির ভিটা থেকে গভীর রাতে নির্যাতনের আর্তনাদের শব্দ ও কান্নার আওয়াজ শোনা যায় বলে জনশ্রæতি রয়েছে। বর্তমানে এলাকাটি কুটির বন নামে পরিচিত। এখনো রাতের বেলায় সেখানে কেউ একা যেতে সাহস পায় না।
ওই ভিটা নিয়ে জানতে চাইলে তারতাপাড়া গ্রামের হাবিবুর মিয়া বলেন, বাপ দাদার কাছে শুনেছি ইংরেজরা এখানে নীল তৈরি করে জাহাজ দিয়ে নিয়ে গেছে। এখানে জাহাজ বান্দার খুঁটি এখনো আছে। তিনি আরও বলেন, ভিটায় লোহার কড়াই ছিল আমি অনেক দিন দেখেছি কয়েক বছর আগে এই ভিটা থেকে বড় গাছ কাটার সময় গাছটি কড়াইয়ের উপর পড়ে কড়াই ভেঙ্গে যায়। এরপর থেকে কড়াইটি আর দেখিনা।
ওই নীল চাষের ব্যাপারে তারতাপাড়া গ্রামের শত বয়সী রাজ মন্ডল কান্নাজড়িতকন্ঠে জানান, কোন কৃষক নীল চাষ করতে রাজি না হলে তাকে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন করে মেরে ফেলা হত। অনেক কৃষকের ছেলে মেয়েরা দিনের পর দিন না খেয়ে মারা যেত।
কালের স্বাক্ষী এই নীলকুঠি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে আজ বিলুপ্তির পথে। যে সামান্য এখনও দৃশ্যমান তাও হারিয়ে যেতে বসেছে। দিনের পর দিন জমি বেদখল হচ্ছে।
এলাকাবাসীর দাবি, ইতিহাসের স্বাক্ষী এই জায়গাটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। বর্তমান শিক্ষার্থীরা নীল চাষের বিষয়ে বইপুস্তকে পড়ে কিছুটা ধারণা অর্জন করলেও সরেজমিনে দেখার মত এখনো অনেক কিছু রয়েছে।
এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করা হবে।
Developed By Muktodhara Technology Limited