শিরোনাম
মনজুর সা'দ | ১৯:৫৪, জুন ৯, ২০২১ | 427
হঠাৎ একটি চিৎকার
মনজুর সা'দ
শিক্ষার্থী:জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ ঢাকা।
আজকের আকাশটা মেঘমেদুর।ঠান্ডা হাওয়া বইছে বাইরে।এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে হয়তো।মাহিন বারান্দায় আসল।চেয়ার টেনে বসল।বাইরের আকাশ এখন স্বচ্ছ।বৃষ্টি হওয়ার পরের আকাশ খুব পরিষ্কার হয়ে থাকে৷ নিষ্পাপ নিষ্পাপ মনে হয়। মন খারাপ থাকলে এই আকাশের দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায়।
মাহিন দুপুরে ঘুমিয়ে ছিল। রুমে প্রচুর গরম ছিল।ইলেক্ট্রিসিটিও চলে গেল।ঠিক তখনই তার মাথা ব্যথা শুরু হল।কি যে যন্ত্রণা! হঠাৎ করেই এ ব্যথা উঠে। মাঝেমধ্যে তার ইচ্ছে করে মাথা কেটে ফেলে দিতে।
বিছানা থেকে উঠে বুক সেলফের দিকে গেল।বুক শেলফের প্রায় সব বই-ই পড়া হয়েছে তার।দুয়েকটা ছাড়া।
সময় পাচ্ছে না। বই কেনার। কোনো একদিন সময় করে যাবে। গুলিস্তানের ফুটপাতে। অনেক সুন্দর সুন্দর বই পাওয়া যায় সেখানে। দামে কম মানে ভালো।অনেকেই আবার পুরনো বই বাঁধাই করে নতুনভাবে বিক্রি করে।
মাহিন বুক সেলফ থেকে একটা বই নামিয়ে বিছানায় রাখল।এখন আর বই পড়তে ইচ্ছে করছে না তার।প্রচন্ড চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছে।জামাটা গায়ে দিয়ে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে এলো।বাসার নিচেই দোকান। সোনা মিয়ার।
খুব ভালো চা বানাতে পারে সে।দূর দূরান্তের মানুষ এসে তার চায়ের প্রশংসা করে।
মাহিনকে দেখে সোনা মিয়া দাঁত বের করে হাসল।চায়ের কাপ ধুতে ধুতে বলল,'ভাইজান, মেলাদিন পরে দেখলাম আপনেরে।
'হ। বাসা থেকে বেশি একটা নামা হয় না ইদানীং। খুব ব্যস্ত হয়ে গেছি। তবে তোমার চা কিন্তু প্রতিদিনি খাই।
'হ হেইডা তো জানি। আপনের বাসার কাজের পোলা বাবু আহে।হেই চা নিয়ে যায়।
আপনের কথা জিগানোর টাইম পাই না।দোহানে হারাদিনি ভিড় লাইগ্যা থাহে।'
'কড়া করে এককাপ চা দাও। রং চা।প্রচন্ড মাথা ধরেছে।'
হঠাৎ বৃষ্টি নামল।আকাশ অন্ধকার হয়ে গেল।আশেপাশের সব কিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে। মাহিন চশমাটা খুলে জামা দিয়ে কাচটা মুছে নিল।
হঠাৎ একটি চিৎকার ভেসে আসল।সোনা মিয়া মাহিনকে বলল,'ভাইজান আপনে একটু কেসে বহেন।আমি দেইখে আইতাছি।
মাহিন দৌড়ে গেল।ঘটনাস্থলে। লোকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।যারা দুয়েকজন আগে এসেছে তারা ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছে নিজের মতো করে।
মাহিন দাঁড়িয়ে রইল।অনেক রিপোর্টাররা এসেছে। লাইভ ভিডিও হচ্ছে।একটুপর পর চুল ঠিক করছে।উপস্থাপনা সুন্দর হওয়া চাই।একদমে বলতে হবে। পুরো দেশ দেখছে হয়তো। অথচ নিহত মানুষদের কাছে কেউ ভিড় জমাচ্ছে না।
গলা কেশে একটু পরিষ্কার করে বলতে শুরু করল__'বজ্রপাত পড়েছে বিদ্যুতের পিলারের তারের ওপর। তার ছিঁড়ে যায়। পাশে লোহার গেট ছিল। সেখানে একজন বৃদ্ধ ছিলেন এবং দুটি বাচ্চা মেয়ে পাখি আর সোমা খেলছিল। তিনজনই মারা গেছে।’
প্রিয়,দর্শক,এখন আমাদের কাছে এই পর্যন্তই বাকি সংবাদ ঠিক সন্ধ্যে ৬ টাই। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন।ধন্যবাদ।
লাইভ প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর মনে হচ্ছে, বেচারা বিরাট বড়ো একটা কাজ করে ফেলেছে।
মাহিন দ্রুত সি এন জি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেল।ডাক্তারেরা পরীক্ষা নিরক্ষা করছে। তাদের শরীরে কোনো দাগ নেই। কিভাবে মারা গেছে কেউ বলতেও পারছে না।
একটু পরেই পাখি আর সোমার মা-বাবা এলো৷ কাঁদতে কাঁদতে।হাসপাতালের লবিতে বসে আছে ওরা। দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।ওদের সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউ নেই।
এ দৃশ্য দেখে মাহিনের চোখে পানি এসে গেল।মাহিন কখনো কাঁদে নি।তার কাঁদতে ভালো লাগে না। আজ তার কাঁদতে ইচ্ছে করছে।খুব।হাসপাতাল থেকে রাস্তায় এলো।রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে সে।রাস্তার পাশের লোকজন ছাতা মাথায় নিয়ে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে।তার চোখের জল আর বৃষ্টির জল এক হয়ে যাচ্ছে।আজও কেউ তার চোখের জল দেখতে পাচ্ছে না...
Developed By Muktodhara Technology Limited