শিরোনাম
গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ | ১৮:৪৬, অক্টোবর ৪, ২০২১ | 312
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভাসহ উপজেলার অনেকেই শখের বসে কবুতর পালন শুরু করে দিয়েছেন। আমরা হাঁস- মুরগী, গরু-ছাগল কিংবা গবাদি পশুর খামার প্রতিষ্ঠা করে ব্যাপক সাফল্য অর্জনের কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু আমাদের দেশে কবুতরের খামার প্রতিষ্ঠা করে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন খুব একটা শোনা না গেলেও নিরবে নিভৃতে এ সাফল্য অর্জন করে চলেছেন পৌরসভার নুনিয়াগাড়ী গ্রামের মশিউর রহমান, লিয়ন, মোহন ও নিশান ।
কয়েকদিন আগে হঠাৎ তাদের খামারে হাজির হয়ে বিভিন্ন উন্নত জাতের কবুতর দেখে শুধূ অভিভূতই হলাম না, সাথে আশ্চর্যও লাগলো কবুতরের খামার দেখে। মশিউর রহমান কবুতরের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও পোষেন। রয়েছে দুটি বিদেশী গাভী।
পৌরসভার মেইন শহরের শ্যামলী কাউন্টারের সামনে অবস্থিত মশিউর, দক্ষিণ বন্দর এলাকার নবাই শেখের ছেলে লিয়ন তার ভাই নিশান, সরকার তেলের পাম্পের পিছনে শম্ভুর ছেলে মহনের খামারে গিয়ে দেখা যায়, আলাদা আলাদা খাচাঁয় পালনরত বিভিন্ন উন্নত জাতের কবুতরগুলোকে খাবার সরবরাহে ব্যস্ত রয়েছেন তারা।
সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে মশিউর রহমান
২০১৬ সালে মাত্র ৩ জোড়া কবুতর ও ৩ জোড়া পাখি দিয়ে যাত্রা শুরু করেন।
বিভিন্ন উন্নত জাতের কবুতরের ছবি দেখে কবুতর পালনে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে তিনি । তবে প্রথমে শুধুমাত্র শখের বশেই কবুতর পালনের যাত্রা শুরু তার।
এদিকে, ৪ জোড়া কবুতর দিয়ে শুরু করে মহনের খামারে বতর্মানে ৩০ জোড়া কবুতর রয়েছে যার মূল্য দেড় লাখ টাকা। মহন জানান, গেরেবার লাহরী জাতের কবুতর রয়েছে তার খামার।এর জোড়া ২০ হাজার টাকা। এছাড়াও কালো বোম্বাই ১২ হাজার টাকার ৫ টি রয়েছে। বাশিবাজ ককার জোড়া ১০ হাজার টাকা। এর রয়েছে ৩ জোড়া। লাল মূক্ষী ৬ হাজার টাকা জোড়া।
লিয়নের রয়েছে মোটে ৩০ জোড়া যার মূল্য ১ লাখ টাকা। লিয়নের খামারে রয়েছে গিরিজেল রেজার ৭ হাজার টাকা জোড়া ৩ জোড়া, হলুদ মূক্ষী ৫ হাজার টাকা জোড়া, ৫ জোড়া। লিয়নের দেখাদেখি তার ভাই নিশান ১৫ জোড়া কবুতর দিয়ে পারিবারিকভাবে খামার শুরু করেছেন।
তাদের খামারে গিয়ে দেখা যায়, ম্যাগপাই পোটার, হলূদ কিং, লাল কিং, ব্লূ কিং, লাল, নীল ও সাদা স্ট্রেচার, বুখাড়া, সারটিং, বিভিন্ন রংয়ের মুক্ষী, নান, লাহোর সিরাজী, সুয়া চন্দ্রন, ডাবু, বেল্ট, লাল ও সিলভারসহ বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর খামারে খাঁচায় পালিত হচ্ছে। এছাড়াও যেকোন সময় প্রাপ্তি সাপেক্ষে উন্নত জাতের কবুতর সংগ্রহ করা হয়ে থাকে বলে খামার মালিক মশিউর জানান।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক খামারী রয়েছে যেগুলি থেকে পছন্দ অনুযায়ী এ সব উন্নত জাতের কবুতর সংগ্রহ করা হয় বলে তারা জানিয়েছেন।
এসব উন্নত জাতের কবুতর পালনে অধিক পরিশ্রম করা না লাগলেও সঠিক পরিচর্যা জরুরী বলে তারা জানান।
মশিউর জানান, কবুতর পালনে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, বর্তমানে কোন কবুতরের কি সমস্যা তা তিনি সহজেই বুঝতে পারেন এবং সে অনুযায়ী নিজেই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
খামার মালিক মহন জানান, তার খামারে বিভিন্ন দামের কবুতর রয়েছে। তবে বর্তমানে তার খামারে সর্বোচ্চ জোড়া ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের কবুতর রয়েছে। এসব থেকে তার মাসে আয় হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে যদি সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যেত। আমরা খামার বড় করে আরো বেশি লাভবান হতাম।
এদিকে লিওন জানান, আমার সংসার চলে কবুতর পালনের উপর। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারতাম।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত খামারিগণ তাদের খামারের কবুতরের মূল ক্রেতা। এছাড়াও অনেকে শখের বশে এসব উন্নত জাতের কবুতর ক্রয় করে থাকে বলে জানান খামারিরা ।
খামার মালিক মশিউর জানান, তার খামারে বর্তমানে যে কবুতর এবং পাখি রয়েছে তা বিক্রি করে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। আর এ আয় দিয়েই তার সংসার চলে।
প্রতি মাসে এসব উন্নত জাতের কবুতরের জন্য ক্রেতাগণ অগ্রিম বুকিং দেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কখনও কখনও চাহিদা অনুযায়ী কবুতর কিংবা পাখি সরবরাহ দেয়া সম্ভব হয় না।
যেহেতু এ সব উন্নত জাতের কবুতরের চাহিদা প্রচুর, তাছাড়া আয়ও মোটামুটি ভাল, সে হিসেবে এটাকে পেশা হিসেবে নিতেই বর্তমানে বেশি আগ্রহী খামার মালিক মশিউর রহমান । তাই তিনি এ পর্যন্ত থেমে থাকতে চান না। তিনি হাতে গড়া খামারটির পরিধির বিস্তৃতি ঘটাতে চান। তিনি জানান, আগামি দিনে আরো নতুন নতুন জাতের কবুতর সংগ্রহের মাধ্যমে তার খামারটি ভরে তুলবেন। যে খামারটি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ জড়ো হবে।
এব্যাপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আলতাফ হোসেন জানান, ইচ্ছে করলে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে এবং করে থাকে। উন্নত জাতের কবুতর খামার প্রতিষ্ঠা করে তারা সফলতা দেখিয়েছেন। আমাদের তরফ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
Developed By Muktodhara Technology Limited