শিরোনাম
মোহাম্মদ ফারুক | ১৮:০২, নভেম্বর ৩, ২০২১ | 203
সার্থক জীবন সকলেই গঠন করতে পারেন না। সমাজে অনেক মানুষই আছেন যারা ব্যাক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সফল। কিন্তু জীবনকে সার্থক রূপদান করা মানুষের সংখ্যা খুব কম। ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি সমাজের মানুষের জন্যে সেবা মূলক কিছু করে যেতে না পারলে জীবনটা সার্থক মনে হয়না। মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাই ছিলেন একজন সফল ও সার্থক মানুষ। তিনি সফল একজন শিল্পদ্যোক্তা ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সজ্জন, সৎ, নির্লোভ, ত্যাগী, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বহুজনের উপকারী, জনদরদী মানুষ। সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা নুরুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন এডভোকেট। আইন বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে পড়াশোনা শেষ করেও পারিবারিক জমিজমা, বিষয় সম্পত্তি তত্বাবধানের ফাঁকে আইন চর্চা বা আইনকে পেশা হিসেবে গ্রহন করার ফুসরৎ তাঁর কখনোই হয়নি। কিন্তু, তাঁর পারিবারিক জমিদারীত্বের বৃত্ত ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। এলাকার মানুষ যাকে অত্যন্ত আপন করে বাবু মিয়া বলেই ডাকতেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে শিল্পপতি ব্যাবসায়ী হিসেবে সাফল্যের চরম শিখরে আরোহন করেছিলেন ১৯৪৫ সালের ৩মে চট্টগ্রামের আনোয়ারার হাইলধরে জন্ম নেয়া বাবু মিয়া। তিনি দুই দুইবার চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ছাড়াও দেশের ব্যাবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং ওআইসিভুক্ত দেশের আন্তর্জাতিক ব্যাবসায়িক সংগঠন তথা চেম্বারের সভাপতি ছিলেন। তথাপি তিনি ব্যাবসায়ী পরিচয়ের চেয়েও একজন রাজনৈতিক নেতা পরিচয়ে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। জমিদারী জাক জমকে, জৌলুস, সুখ, আহলাদ আর আতিশর্যে যার জীবন কাটার কথা, যার ছিল আইনজ্ঞ জমিদার পিতা, ছিল প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী বড় ভাই বশিরুজ্জামান চৌধুরী সেই রাজনীতিপ্রিয় আখতারুজ্জাম চৌধুরীকে রাজনৈতিক কারণে হতে হয়েছে ফেরারী, সইতে হয়েছে কারাভোগ। গ্রামের হাইলধর স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে আনোয়ারা হাই স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল হয়ে পটিয়া হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন করে ঢাকার নটরডেম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়া অবস্থায় বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে ভর্তি হয়ে শেষে ১৯৬৪ সালে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন এসোশিয়েট ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৬ তে গঠিত অবিভক্ত চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের নির্বাহী সদস্য এবং চট্টগ্রাম দক্ষিন মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হন তিনি (তথ্য সুত্র- চট্টল গবেষক, ইতিহাস পর্যালোচক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক নাছির উদ্দিন চৌধুরীর লেখা প্রবন্ধ)।
মাঝে কয়েক বছর উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে দেশে এসে ১৯৬৫ সালে বড় ভাই বশিরুজ্জামান চৌধুরীর সাথে ব্যাবসায় নিয়েজিত হলেও রাজনীতিপ্রিয় মানুষটি দেশের ক্রান্তি লগ্নে কেবল অর্থের পিছনে না ছুটে ১৯৬৭ সালে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং বঙ্গবন্ধুর নৈকট্য লাভ করেন। সত্তরের নির্বাচনে আনোয়ারা থেকে নির্বাচিত হন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য। পাকিস্তান সরকার বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে তাঁর পাথরঘাটাস্থ জুপিটার হাউজ হয়ে ওঠে সংগ্রাম কমিটি চট্টগ্রামের অলিখিত কার্যালয়। এখানে বসেই চট্টগ্রামের নেতারা আন্দোলন সংগ্রামের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ নিয়ে থাকতেন। ১৯৭১ সালের ২৫মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষনাটির টেলিগ্রাফ চট্টগ্রাম পৌঁছুলে এই জুপিটার হাউজ থেকেই সাইক্লোস্টাইল করে প্রচার করা হয়। পাঠানো হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে আখতারুজ্জামান চৌধুরী পাড়ি জমান ভারতে। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে তাঁকে এই সরকারে ত্রাণ ও পূণর্বাসন কমিটির সদস্য করা হয়। পরিবর্তীতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যসহ নানান দেশে কাজ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি বাংলাদেশের গণপরিষদ সদস্য হন। দায়িত্ব নেন চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে।
আন্তর্জাতিক চক্রান্তে দেশের বিপথগামী সেনা কর্তৃক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে এবং ৩ নভেম্বর জেলহত্যায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর আওয়ামীলীগের ওপর দুর্যোগ নেমে আসে। জনতার বাবু মিয়াকে বেচে নিতে হয় ফেরারী জীবন। কিন্তু, থেমে থাকেননি তিনি। সুযোগ বুঝে নিজের মেধা, শ্রম আর অর্থ দিয়ে অন্ধকার দুর্দিনে পতিত আওয়ামীলীগকে সারাদেশে সংগঠিত করার প্রয়াস চালান তিনি। এতে ক্ষিপ্ত স্বৈরাচারী সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের কোপানলে পড়ে কারাভোগ করতে হয় প্রিয় নেতা বাবু ভাইকে।
১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকণ্যা দেশে এসে সভানেত্রীর দায়িত্ব নিয়ে দল গোছানোর কাজে নামলে আস্থার সাথে পাশে থাকেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাই।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের তপ্ত সময়ে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে বাবু ভাইয়ের মত মহীরুহের সুশীতল ছায়া অনুভব করেছি প্রথম। পর্যায়ক্রমে পশ্চিম পটিয়া থানা ও চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ মহীয়ান নেতার ঘনিষ্ট সান্নিধ্য ও নেতৃত্ব লাভের সুযোগ আমার হয়েছে। আমি দেখেছি, মানুষকে তিনি খুব বেশী ভালবাসতেন। পছন্দ করতেন শত সহ¯্র মানুষের কাছে থাকতে এবং মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে। তিনি নিজগ্রাম, চট্টগ্রাম, ঢাকা যেখানেই যেতেন শত সহস্র মানুষ তাকে ঘিরে গমগম করত। তিনি মানুষের সুখ দুখের কথা অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে শুনতেন। ছোট বড় কোন অসংগতি সহজে তার চোখ এড়াতে পারতনা সহজে। ভীর ঠেলে বৈঠকখানায় যে লোকটি তাঁর কাছে যেতে পারেননি, বাসা হতে বের হওয়ার পথে গাড়ী থামিয়ে তিনি তাকে কাঁছে ডেকে তাঁর সমস্যার কথা শুনেছেন। তিনি কথা বলার চেয়ে শোনাটায় বেশী গুরুত্ব দিতে পারতেন বলেই হয়তো, তাঁকে দেখেছি অনেক জটিল সমস্যার সমাধান অতি অল্প কথাতেই সহজে দিতে পারতেন। মানুষের কথা শোনার মত ধর্য্য ও ইচ্ছা শক্তি তাঁর মধ্যে ছিল বলেই হয়তো তিনি সমস্যা গভীরে যেতে পরতেন এবং সহজে সমাধান খুঁজে বের করে আনতে পারতেন। দেখেছি, অনেকেই তাঁর কাছে তাদের পারিবারিক, সামাজিক সমস্যা নিয়ে আসতেন। মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংকটে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, পরামর্শ ও মন্তব্য তিনি এক উক্তিতে দিয়ে দিতেন। তাঁর সিদ্ধান্ত, পরামর্শ ও মন্তব্য সবসময় সব জায়গায় সার্বজনীনতা পেয়েছে গুরুত্বের সাথে।
১৯৪৫ এর ৩ মে হাইলধরে আবির্ভুত মহাপ্রাণ প্রিয়নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাই ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাভেথ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগের আগে ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আনোয়ারা-পশ্চিম পটিয়া থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। বিভিন্ন সময়ে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং আমৃত্যু চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাই বাংলাদেশ সরকার জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরীকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য মরনোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২১ প্রদান করে সম্মানিত করে। ২০ মে ২০২১ তারিখে পরিবারের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানন্ত্রীর হাত থেকে এ পুরস্কার গ্রহন করেন মাননীয় ভূমিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয়।
নানান ঝড়-ঝঞ্ঝা, সামাজিক-রাজনৈতিক-ব্যবসায়িক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের সীমাহীন ব্যস্ততার মধ্যেও বাবু ভাই ছিলেন একজন সফল পিতা। তাঁর সকল পুত্র-কন্যাগণ আজ স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর প্রথম পুত্র আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মন্ডলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। অত্যন্ত দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠতায়
বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমি মন্ত্রনালয় সামলে তিনি দেশের অন্যতম সেরা সফল মন্ত্রী। এর পূর্বে অত্যন্ত সফলতার সাথে তিনি একই মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন। মন্ত্রনালয়কে ডিজিটালাইজেশন করে স্বচ্ছতা আনায় তিনি আন্তর্জাতিকভাবে প্রসংশিত হয়েছেন এবং নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়ে রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।
ভূমি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বে তিনি তাঁর ব্যবসায়িক কর্মকান্ড হতে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। অথচ তিনি ছিলেন দেশের সফলতম ব্যবসায়ীদের একজন। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতিসহ এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। এতো গেল মরহুম জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাইয়ের প্রথম পুত্রের কথা। তাঁর ২য় পুত্র বাংলাদেশের প্রাইভেট ব্যাংকিং সেক্টরের পথিকৃৎ ব্যাংক ইউসিবি-এর চেয়ারম্যান (ইসি) আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। আর কণিষ্ট পুত্র আসিফুজ্জামান চৌধুরী জিমি একজন সফলতম তরুন উদ্যোক্তা। তিনি বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া তিনি তাঁর পিতার আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে আওয়ামী রাজনীতি ও সমাজের কল্যানে নানাভাবে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন। আজ প্রিয় বাবু ভাই নাই ঠিকই কিন্তু তিনি তাঁর তিন সন্তানকে বাংলাদেশের জন্য রত্ন হিসেবে গড়ে রেখে গেছেন।
মৃত্যুঞ্জয়ী কালপুরুষ, মহাপ্রাণ বাবু ভাইয়ের মহাজীবনের অবসানে তাঁর কফিন যখন চট্টগ্রাম আসে বুঝলাম, তিনি কেন মানুষকে এত ভালবাসতেন। তাঁর দাফনোত্তর নামাজে জানাজায় মানুষের ঢল রূপ নিয়েছিল বিশাল জনসমুদ্রে। এ বিশাল জনসমুদ্রে মিলিত জনতার আবেগ ছাপিয়ে গিয়েছিল প্রশান্ত মহাসাগরের বিশালতাকেও। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, পরিবার পরিজন, ব্যাবসায়ী ছাড়াও অনেক মানুষকে দেখেছি গুমরে গুমরে কাঁদছিল যাদের পরিচয় কেউ জানেনা। অত্যন্ত সাধারন মানুষ যারা রাজনীতি বোঝেনা, বোঝেনা ব্যাবসা বাণিজ্য। তারা ছিল কেবল বাবু ভাইয়ের আত্মার আত্মীয়, ভালবাসার মানুষ, উপকারলাভী।
এখনো প্রিয়নেতা বাবু ভাইকে হারানোর স্মৃতি মনে করে শত সহস্র মানুষ নিরবে নিভৃতে চোখ মুছে কান্না লুকায়। বাবু ভাইয়ের সাথে রোমাঞ্চকর ও আনন্দের সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে এখনো হাজার হাজার মানুষের চোখের কোনে ঝিলিক দেয় স্মিত হাঁসির রেখা। বাবু ভাই তাঁর কর্ম ও গুণে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর শূন্যতা কখনোই পূরণ হবার নয়। সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তাঁর অনুপস্থিতি পলে পলে অনুভব করছি আমরা। চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগকে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক ধারায় পরিচালনার ক্ষেত্রে কাউকে কোন প্রকার ছাড় দেননি। আজকে আদর্শিক নেতাকর্মীরা যারা শত প্রতিকুলতায় হামলা, মামলা, নির্যাতনেও বাবু ভাইয়ের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারন করে কঠোর আন্দোলন সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আনার পথ সুগম করেছিলেন তারা খুবই হতাশ। সঠিক অভিভাবকত্বের শূন্যতার সুযোগে আজকে বাবু ভাইয়ের প্রিয় দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগে সপ্তর্পনে অনুপ্রবেশ করে আদর্শহীন, সুবিধাবাদী, হাইব্রীড- কাউয়া এবং বারবার কুয়া পাল্টানো ব্যাঙের মত দল পাল্টানো পার্মানেন্ট পার্টির লোকজন দোর্দন্ড প্রতাপ ছড়িয়ে আদর্শিক ও প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রাজনীতি বিমূখ করে দিয়েছে। যারা এখনো রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে তারাও অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালেও সাধারন মানুষ আওয়ামী লীগকে ভালবাসত, আওয়ামী লীগ নেতাদের পছন্দ করত। তাই, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে একপ্রকার মুছে ফেলা আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দিনে দিনে মানুষের ভালবাসায় ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশ পরিচালনা করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমগ্র বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার দিবারাত্র নিরলস পরিশ্রমে গড়া এত উন্নয়ন, এত সফলতা হাইব্রীড কাউয়া সুবিধাবাদী ব্যাঙেদের কারণে মানুষের কাছে যাতে পুরোপুরি ম্লান হয়ে না যায় সেদিকে নজর দেয়া সময়ের প্রয়োজন। উন্নয়নের অদম্য অগ্রযাত্রা মানুষের হৃদয়ে যথার্থ দাগ ফেলতে না পারলে দলের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত অশুভ বলেই মনে করি।
জানি, বাবু ভাইকে হারিয়ে যে শূন্যতা তৈরী হয়েছে তা কখনোই পূরণ হবেনা কিন্তু কিন্তু তাঁর আদর্শের ধারায় দলকে পরিচালনা করতে নৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ এখনি শুরু করার জন্য জ্যেষ্ট নেতৃবৃন্দের কাছে জোর দাবী জানাই। আর যারা বাবু ভাইয়ের আদর্শের কর্মী সমর্থকরা আবারো ঐক্যবদ্ধ হয়ে হাইব্রীড, সুবিধাবাদীদের হটিয়ে দলের মধ্যে বাবু ভাইয়ের আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে নিজেদের সামর্থ ও পারঙ্গমতার প্রমান দিতে প্রস্তুত হওয়ার জন্য বিনীত আহ্বান জানাই।
Developed By Muktodhara Technology Limited