image
image
image
image
image
image

আজ, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩ ইং

একুশের স্মৃতিচারণ

মিলাদ হোসেন সুজন    |    ১৫:২০, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০২২   |    168




একুশের স্মৃতিচারণ

সময়টা ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ সাল। দিনশেষে রাত পোহালেই ২১ শে ফেব্রুয়ারী। স্কুলে তখনো শহীদ মিনার ছিলো না। প্রতি ফেব্রুয়ারীতে বাঁশ দিয়েই শহীদ মিনার তৈরী হতো। স্কুল থেকে দপ্তরিসহ সিনিয়র শিক্ষার্থী ভাইদের উপর দায়িত্ব পড়লো শহীদ মিনার তৈরীর। প্রশস্থ মাঠের এক কোনে শহীদ মিনার তৈরীর জায়গা নির্ধারণ হলো। স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। সবাই ক্লাসের দিকে মনোযোগী থাকলেও আমার দৃষ্টি জানালা দিয়ে মাঠের শহীদ মিনার তৈরীর দিকে।

 

 

 

 

মন ছটফট করছে ঐখানে যাওয়ার জন্য- কারন খাতা, কলমে শহীদ মিনার এঁকেছি কিন্তু কখনো বড় করে বাঁশ দিয়ে তৈরি করিনি। সেদিন স্কুল সকাল সকাল ছুটি হয়ে গেল। সবাই বাসায় যাচ্ছে আর আমি শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ দেখতে মাঠের কোনে দাঁড়ালাম। প্রচন্ড রোদ, ভাইয়েরা কেউ বাঁশ কাটছে কেউ আবার গর্ত করছে। আমি পিটে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। হঠাৎ একজন বড় ভাই জিজ্ঞেস করলেন - কি রে তুই এখানে কেন?  বাসায় যাস নি? আমি উত্তরে বললাম না ভাইয়া আমি শহীদ মিনার তৈরী দেখবো। 

 

 

 

 

 

তখন তিনি বললেন তাহলে আয় আমাদেরকে কাজে সাহায্য কর। হুকুম পেতেই তাড়াতাড়ি ব্যাগ রেখে লেগে গেলাম কাজে। মনে মনে অসাধারণ অনুভূতি বিরাজ করছে৷ মুচকি মুচকি হাসছি। গর্ত থেকে মাটি তুলার দায়িত্ব পড়লো আমার উপর। ভাইয়েরা গর্ত করছে আর আমি মাঠি তুলছি। কাজ করতে করতে প্রাশ সন্ধ্যা হয়ে গেল, সূর্যটা পশ্চিম আকাশে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। মুয়াজ্জিন ও প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেম মাগরিবের আজান দেওয়ার। 

 

 

 

 

ঘাসের উপর শিশির ফোঁটায় মাঠ পুরো ভিজে গেছে। মাথার উপর দিয়েও উড়ে যাচ্ছে অতিথি পাখি। আমাদের কাজও প্রায় সম্পন্ন। কাজ করতে করতে বাড়ির কথা পুরোই খেয়াল নেই, ঐদিকে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেছে। স্কুল ছুটি হলো দুপুরে এখন সন্ধ্যা হতে চললো আমি এখনো বাসায় যাইনি। খুঁজাখুঁজি পড়ে গেল চারদিকে। মা কেঁদে কেঁদে কখনো বেহুশ হচ্ছেন। বাবা, ভাই আমাকে চারদিকে খুঁজছে। হঠাৎ শহীদ মিনারে কর্মরত দপ্তরি ভাইয়ের কাছে স্যার কল করলেন আর জানতে চাইলেন শহীদ মিনারে ক্লাস সেভেনের কেউ আছে কি না।

 

 

 

 

তখন দপ্তরি ভাই বললেন হুম একজন আছে। স্যার আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন আর বললেন তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে। বাসায় আমাকে খুঁজাখুঁজি চলছে৷ আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে আজ আমার কপালে দুঃখ আছে৷ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলাম। বাসায় গিয়ে দেখতে পেলাম মা উঠোনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। মায়ের সামনে যেতেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলেন। 

 

 

 

 

আর বললেন যে তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নিতে। বাবা খুব রেগে আছেন সামনে পেলে আমার অবস্থা খারাপ হবে।আমিও তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষ হতে না হতেই বাইরে বাবার শব্দ শুনতে পেলাম। তাড়াতাড়ি জানলা দিয়ে বেরিয়ে গেলাম ঘরের পিছনে। সেখানে লুকানোর জন্য প্রধান স্থান ছিলো আমাদের লিচু গাছ। মগডালে উঠে বসলে কেউ দেখতে পায় না। বাবা বুঝতে পারলেন আমি বাসায় আসছি এবং উনার শব্দ শুনে পালিয়েছি। অপেক্ষা করলাম বাবা কখন যাবেন ঐদিকে মশা আমার পুরো শরীর ফুলিয়ে দিচ্ছে। মা তাড়াতাড়ি বাজারের ব্যাগ দিয়ে বাবাকে বাজারে পাঠিয়ে দিলেন। নেমে আসলাম গাছ থেকে। আবার ঘরে গেলাম। 

 

 

 

 

মা বললেন তাড়াতাড়ি পড়তে বসতে। আমি না পড়ে চলে গেলাম চাচার ঘরে শহীদ মিনার তৈরীতে ছিলাম এটা সবাইকে জানাতে যে হবে। হাসিমুখে সব বললাম সমবয়সী চাচাতো ভাইকে এবং ২১ ফেব্রুয়ারী ফুল চুরি করে কিভাবে সবার আগে ফুল দেওয়া যায় তা নিয়ে প্রস্তুতি ও সম্পন্ন হলো। তারপর ঘরে এসে কাঁথা মুড়ে শুয়ে পড়লাম। কারণ বাবাকে কোনো ভাবে বুঝতে দেওয়া হবে না আমি জেগে আছি। রাতে ভালোই ঘুম হলো হঠাৎ আসসালাতুখাইরুমমিনাননাউম,, শব্দে ঘুম তার দখলকৃত চোখের পাতা থেকে পালালো। লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।

 

 

 

 

বাবা নামাজে গেছেন মসজিদে। দরজা খোলা। বাইরে এসে দেখলাম কুয়াশার চাদরে সবকিছু ঢেকে আছে। কাছের জিনিসই স্পষ্ট বুঝা যায় না।আমি চুপি চুপি চাচাতো ভাইয়ের জানালার সামনে গিয়ে দুইবার ডাক দিলাম। তৃতীয় বার দেওয়ার সময় সে উঠে গেল। দুজন মিলে বেরিয়ে পড়লাম ফুল চুরির মিশনে। ঠান্ডায় শরীর কাঁপছে,, দুজনের। প্ল্যান অনুয়ায়ী আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটি বড় বাড়িতে ফুল চুরির সিদ্ধান্ত করে ছিলাম। সেই বাড়ির পাশে যেতেই পড়লাম বিপদে। বাড়ির প্রধান গেট বন্ধ  কেমনে ঢুকবো?  বুক ও থরথরে কাঁপছে ভয়ে। জীবনের প্রথম কারো বাড়ির ফুল চুরি।সে আমাকে কাঁদে নিলো আমি গেইট বেয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেইট খুলে তাকেও প্রবেশ করালাম তারপর আমি পাহারায় দাঁড়ালাম আর সে চুপিচুপি বাগানে প্রবেশ করে অনেকগুলো ফুল কেটে নিলো৷ তারপর দুজনে মিলে দৌড়ে চলে আসলাম। 

 

 

 

 

ফুলগুলো নিয়ে গেলাম আমাদের লিচু তলায় সেখানে ফুলগুলো কেটে দুজনে মিলে সুন্দর করে একটা তোড়া তৈরি করলাম। তার উপর সাদা কাগজে লিখে দিলাম শ্রদ্ধাঞ্জলি।। ফুলগুলো লুকিয়ে রেখে ঘরে গিয়ে নাস্তা করে দুজনে আবার ফুলগুলো নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম স্কুলের উদ্দেশ্য। স্কুলের গেটে প্রবেশ করতেই আগে চোখে পড়লো অপরূপ সাজে সজ্জিত শহীদ মিনার। মন খুশিতে নেচে উঠলো। তারপর স্যারেরা সবাইকে লাইনে দাঁড় করালেন বিশাল র্্যালি  হলো লাইনের সবার আগে আমরা ছিলাম। প্রথম এতো আনন্দ হচ্ছে। শেষে সবার আগে গিয়ে আমরা স্বপ্নের শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করলাম। এখনো  ফেব্রুয়ারী আসলে স্মৃতিপটে ভেসে উঠে সেই দিনগুলো।। 



রিলেটেড নিউজ

উখিয়ায় প্রকাশ্যে পাহাড় কর্তন ও মাটি ভরাট বাড়ছে, নিরব বন বিভাগ

০৮:৫৬, মার্চ ১, ২০২২

উখিয়ায় প্রকাশ্যে পাহাড় কর্তন ও মাটি ভরাট বাড়ছে, নিরব বন বিভাগ


Blood Pressure

১৩:৫৩, ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০২২

Blood Pressure


সকালে দুধ চা খেলে যা হয়

১১:৪৫, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২২

সকালে দুধ চা খেলে যা হয়


রুচি ফিরবে রুটিতে

১৪:২০, ফেব্রুয়ারী ২২, ২০২২

রুচি ফিরবে রুটিতে


একুশের কবিতা

১৫:২৫, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০২২

একুশের কবিতা


একুশের স্মৃতিচারণ

১৫:২০, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০২২

একুশের স্মৃতিচারণ


A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: fwrite(): Write of 34 bytes failed with errno=122 Disk quota exceeded

Filename: drivers/Session_files_driver.php

Line Number: 263

Backtrace:

A PHP Error was encountered

Severity: Warning

Message: session_write_close(): Failed to write session data using user defined save handler. (session.save_path: /var/cpanel/php/sessions/ea-php74)

Filename: Unknown

Line Number: 0

Backtrace: