শিরোনাম
মিঠু মুরাদ, | ১৬:৪১, নভেম্বর ১১, ২০২২ | 67
অনেক ঘুরছি পাইনি, বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে গরুর স্লিপ কিনে নিয়েছি। ফরিদুল মেম্বার বিক্রি করে, তার কাছ থেকেই নিছি। আর টাকা ছাড়া দেয়না। এভাবেই বলছিলেন লালমনিরহাট পাটগ্রাম দহগ্রাম ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোরশেদ আলমের স্ত্রী ফুলবানু।
গণমাধ্যমকর্মীদের ফুলবানু বলেন, সাহায্য সহযোগিতার আশায় ভোট দিয়ে ফরিদুলকে মেম্বার বানিয়েছি, এখন কোনো সহযোগিতা পাইনা। তারা টাকা নিছে সিরিয়াল দিছে। একই ওয়ার্ডের সিদ্দিক আলী আক্ষেপ করে বলেন, আমার সামান্য কিছু জমি আছে, তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাই। এক ছেলে রাজশাহী ভার্সিটিতে পরে, আর এক মেয়ে সেও ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে।তাই স্লিপের জন্য হাবিবুর চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু তখন সে আমাকে নাকি চেনেই না। অথচ ভোটের সময় তার জন্য কতকি করলাম।
জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দহগ্রামের সাধারণ কৃষকের এসব অভিযোগ এখন নতুন কিছু নয়। দুই, চার ও ছয় নম্বর ওয়ার্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক জানান, কয়েকদিন আগে প্রতিটি স্লিপ বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ওই স্লিপের দর উঠেছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে দহগ্রাম থেকে করিডোর গেইট দিয়ে ৬০ টি গরু দেশের মুল ভুখন্ডে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় বিএসএফ। পাটগ্রাম শহরে গরুর হাট শুরু হয় প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার। সেই অনুযায়ী দহগ্রাম থেকে প্রতি শনিবার ৩০ টি ও বুধবার ৩০টি গরু আসে দহগ্রাম থেকে। এসব গরু একসাথে জড়ো করে বিজিবি বিএসএফর তত্বাবধানে দেশের মুল ভুখন্ড করিডোর গেইট পার করে দেয়া হয়। তবে গরুগুলো কাগজে কলমে কৃষকের দেখানো হলেও বাস্তবে এসবের অধিকাংশ চোরাই পথে আনা ভারতীয় গরু। মুলত সিন্ডিকেট সদস্যরা দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও ইউপি সদস্যদের সাথে যোগসাজস করে সাধারণ কৃষকদের বঞ্চিত করে দীর্ঘদিন থেকে অবাধে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, গত ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গলায় সিন্ডিকেট সদস্যরা হাজার হাজার টাকার মালা সাজিয়ে গলায় পড়িয়েছে। সেসব ছবি ফেসবুকে সেসময় ভাইরাল হয়েছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন কোন স্বার্থে তারা নির্বাচিত সদস্যদের গলায় টাকার মালা পড়িয়েছে তা দুদকের তদন্ত করে দেখা উচিত। দহগ্রাম থেকে প্রতি সপ্তাহে যে গরুগুলো আনা হয় সেসব গরু প্রতি ইউপি সদস্য চার থেকে পাঁচটি, সংরক্ষিত একটি এবং চেয়ারম্যান ছয় থেকে সাতটি ভাগ করে নেন। তবে বিভিন্ন সদস্যের অংশ থেকে প্রতি সপ্তাহে একটি দু’টি বা তিনটি গরু বিজিবির সিজার লিস্টে দেখানো হয়। দহগ্রামে এভাবেই চলছে গরুর সিন্ডিকেট বানিজ্য। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট।
জানা যায়, পাঁচ বছর পর পর এই তালিকা প্রণয়ন করার কথা, সেই অনুযায়ী পূর্বের যে তালিকা, তার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। পুলিশ, বিজিবি এবং স্থানীয় প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সমন্বয়ে নুতন তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্ত ওই তালিকা আজও আলোর মুখ দেখেনি। এ বিষয়ে দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আনিসুর রহমান প্রায় এক মাস আগে তালিকা সম্পূর্ণ হয়েছে জানিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে বিজিবি বলতে পারবে। হালনাগাদ না করে মেয়াদত্তীর্ণ ওই তালিকায় কিভাবে এখনো গরু যাচ্ছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, সিন্ডিকেট সদস্যরা তালিকায় অতিরিক্ত গরু উঠিয়ে এক ব্যক্তি একাধিকবার গরুর স্লিপ নিয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছে।
এভাবে জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ কৃষকদের বঞ্চিত করে প্রতি সপ্তাহে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে দহগ্রাম এক নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফরিদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মুখ থাকলে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। পরে এ বিষয়ে সাক্ষাতে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন তিনি। দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান পূর্বের তালিকা দিয়ে এখনো গরু যাচ্ছে জানিয়ে বলেন, আপনি প্র্যাকটিক্যাল এসে দেখেন, এর বেশী কিছু বলতে পারবোনা। কৃষকের খাতা/ রেজিষ্ট্রার মেইনটেন করে কাগজ দেওয়া হয়, এর বাইরে কারও কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেওয়া হয়না বলে তিনি দাবি করেন।
Developed By Muktodhara Technology Limited