শিরোনাম
পঞ্চগড় হতে মোহাম্মদ বাবুল হোসেন : | ১৭:১৬, মার্চ ১৩, ২০২৩ | 54
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় গণগ্রেপ্তার আর গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূণ্য হয়ে পড়া বাড়ির নারী সদস্যরা যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের আহাজারি শোনারও কেউ নেই।
কয়েক গ্রামের কয়েকশ নারী তাদের আহাজারি শোনাতে চেয়েছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদকে। কিন্তু প্রশাসনের কড়াকড়িতে সে সুযোগও হয়নি। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে গণমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ ঝাড়েন।
রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার শালশিরি গ্রামে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি-ঘর পরিদর্শনে গেলে সড়কের পাশে অবস্থান নেন এই নারীরা।
তাদের অভিযোগ, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটে জড়িত না হয়েও আসামী হয়েছেন তাদের স্বামী-সন্তানরা। অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন, বাকীসব গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়ি ছাড়া। ফলে বাড়িতে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় অনাহারে, অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন বলে জানান তারা।
ফুলতলা এলাকার ফিরোজা বেগম বলেন, আমার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে গ্রেপ্তার হয়েছে। আরেক ছেলে এবং স্বামী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বাড়িতে কেউ নেই, খুব কষ্টে চলতে হচ্ছে। এভাবে কতদিন চলা যায়। সংঘর্ষের আশেপাশেও তার স্বামী সন্তানরা ছিলেননা দাবি তার।
শিরিন আক্তার নামের এক তরুনী বলেন, তার এক চাচার গ্রেপ্তারের খবর জানতে গিয়ে আরেক চাচাও গ্রেপ্তার হয়। এখন বাড়ির দুইজন জেলে, অন্য পুরুষেরা ঘর ছাড়া। আমিও চাই আসল অপরাধীরা আইনের আওতায় আসুক, কিন্তু নিরীহ মানুষদের কেন হয়রানি করা হচ্ছে। এতে তো আসল অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে।
সোনিয়া বেগম নামের একজন জানান, তার স্বামী কয়েকদিন ধরেই নিখোঁজ। ধারণা করছেন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারের ভয়ে থানায় খোঁজ নিতে যাননি জানান।
উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় পঞ্চগড়। জুমআর নামাজের পর আহমদিয়াদের তিন দিনব্যাপী জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ। বিক্ষোভ মিছিলটি কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌড়ঙ্গী মোড়ের দিকে আসতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে তাদের সাথে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশের উপর হামলা করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশও অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এর মধ্যেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়া আহমদিয়াদের বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এঘটনায় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের একজন এবং মুসল্লীদের মধ্যে একজন নিহতও হন। পরে রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, পরদিন শনিবার সন্ধার পর ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা দুজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে’- এমন গুজবকে কেন্দ্র করে আবারও হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০টি মামলা নিয়েছে পুলিশ। পঞ্চগড়ের বোদা ও সদর থানায় করা এসব মামলায় নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে ১০ হাজারেরও অধিক। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮৭ জনকে।
পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা বলেন, আসামি গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য, বিভিন্ন স্টিল ছবি যাচাই-বাছাই করেই দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
Developed By Muktodhara Technology Limited